লবো মহররম এবং আশুরার তাৎপর্য ও ফজিলত এবং কোন বিষয়গুলো করা ঠিক এবং কোন বিষয়গুলো করা ঠিক না তা নিয়ে কথা বলব। চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। উল্লেখ্য এভাবের আশুরা ১৯ শে আগষ্ট, ২০২১ ইং তারিখে হবে।
মহরম বা আশুরা :
মহরম হিজরী বছরের প্রথম মাস আর এই মাসের কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা আছে পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে বর্ণিত যে মাসগুলোতে যুদ্ধ হারাম করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই আরবি বছরের প্রথম মাস তথা মহরম মাস । রাসুল সাঃ এ বিষয়ে তিনি বলেন “ রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহররম মাসের সাওম এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের নামাজ’ ”। তাহলে বুঝতে পারছেন এই রাতের কতটা ফজিলত পূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
মহররম মাসের 10 তারিখে ইসলামী পরিভাষায় আশুরা বলা হয়। আর এই দিনে একদিকে যেমন রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত অন্যদিকে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। তাই এই দিনটি একজন মুসলিমের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ দিন।
এছাড়াও হাদীস শরীফের বর্ণনায় এসেছে যে – “ পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে । অনেক নবী রাসূলের জীবনের স্মরণীয় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই দিনের সংঘটিত হয়েছে বলে কিতাবে পাওয়া যায়। বিশেষ করে একটি ঘটনার কথা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে হযরত মুসা (আ:) ও তার দলবল নিরাপত্তা সমুদ্র পার হয় এবং ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত শহর ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা সেদিনের সংঘটিত হয়েছিল যার বিশুদ্ধ পবিত্র কিতাবে পাওয়া যায়।
আশুরার তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত
মহরম ও আশুরার নিয়ে কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো । আশা করি, হাসিদ গুলো থেকে আশুরার তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন।
১. এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিযী শরীফ) তবে যিনি আশুরার রোজা রাখতে চান তার ব্যাপারে কর্তব্য হলো, তিনি শুধু আশুরার দিন অর্থাৎ মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখবেন না, বরং একদিন আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখবেন। কারণ এ রোজা রাখার ব্যাপারে একটি হাদিসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার রোজার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখো। (তিরমিজি- ৭৫৫,
হাদীসটি সহীহ) আশুরার দিনের রোজার সূত্রের ব্যাপারে অপর একটি হাদিসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো। কেননা, এই দিনে আম্বিয়ায়ে কিরামগণ (আ.) রোজা রাখতেন। হযরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন। তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তাহলে তুমি মহররম মাসে রোজা রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যে দিনে আল্লাহ তা’আলা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন। (তিরমিযী ১ম খণ্ড)
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আশুরার দিন সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, এই দিন জাহেলি যুগের লোকেরা রোজা রাখত…।’ (মুসলিম)
এছাড়াও আরো অনেক হাদিসেই আশুরা ও মহররম নিয়ে বলা হয়েছে।
আশুরার দিনটি কি আমরা আজও সঠিকভাবে পালন করি ?
আমরা আসলে অনেক সময় অনেকে আশুরার তাৎপর্য বুঝতে পারিনা। তাই ভুলবশত অনেক ধরনের কাজ করে থাকি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুক। এই আশুরার দিন অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে । হযরত মুসা (আ:) ও তার দলবল নিরাপত্তা সমুদ্র পার হয় এবং ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত শহর ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা সেদিনের সংঘটিত হয়েছিল যার বিশুদ্ধ পবিত্র কিতাবে পাওয়া যায়।
এছাড়াও সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে 61 হিজরীতে মহররম মাসের 10 তারিখে কারবালার প্রান্তরে তারি প্রাণপ্রিয় নাতি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বিপথগামীদের সৈন্য বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়াও আরও অনেক ঘটনা রয়েছে।
আশুরায় করণীয়
-
আশুরার দিন রোজা রাখা
আশুরার সময় রোজা ও তাৎপর্য সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে যে – হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন ইহুদিদেরকে আশুরার রোজা রাখতে দেখলেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন- ‘এটা কি?’ উত্তরে তারা বলল, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রু (ফেরাউন) থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তাই এ দিনে মুসা (আ.) আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায়কল্পে রোজা রেখেছেন। আর তাই আমরাও আমাদের নবীর অনুসরণে রোজা রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, মুসা (আ.) এর সঙ্গে (কোনো নেক আমলের সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে) আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এদিনে রোজা রাখলেন এবং সাহাবিগণকে রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন। (বুখারী-হাদিস নং-১৮৬৫)
-
ক্ষমা
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিযী শরীফ) । তাই যত পারুন, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন, একমাত্র তিনি এ আপনাকে ক্ষমা করে ব্যাপারে। তবে যিনি আশুরার রোজা রাখতে চান তার ব্যাপারে কর্তব্য হলো, তিনি শুধু আশুরার দিন অর্থাৎ মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখবেন না, বরং একদিন আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখবেন। কারণ আশুরার তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলতের ১ নং পয়েন্ট এ বণর্ণা করা হয়েছে।
-
ত্যাগ ও কুরবানির শিক্ষা গ্রহণ
ইয়াজিদ বাহিনীর অবৈধ রাষ্ট্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ইসলামি খেলাফতের পক্ষে কথা বলায় অন্যায়ভাবে নিরাপারাধ হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ৭০ জন সঙ্গী-সাথীকে হত্যা করে।এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অন্যায় কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে তবেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থাপনা করতে পারব।
-
দান-সাদাকাহ করা।
এদিনের দান-সাদাকা করার চেষ্টা করবেন। রোজাদার কে ইফতার করানোর চেষ্টা করবেন। এমনি রোজাদারকে ইফতার করানো ফজিলত অনেক কিন্তু এই বিশেষ দিনে ইফতার কর্বালা আলো উত্তম হয়।
আশুরায় বর্জনীয়
- আহত করা থেকে বিরত থাকুন। আমরা অনেক মুসলিম কান্ট্রি তে দেখি তারা এই দিনে নিজেকে নিজে আঘাত করেন এবং রক্তাক্ত করেন। তাই এগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।
- মিছিল থেকে বিরত থাকবেন আমরা অনেক সময় দেখি যে এই দিনকে কেন্দ্র করে অনেকে বড় মিছিল বা রাস্তা প্রদক্ষিণ করার পরিকল্পনা করে এটা শরীয়ত ভিত্তিক নয়।
- হযরত হুসাইন আলাইহিস সাল্লাম এর স্মরণে মিথ্যা খবর নকল কভার বানানো থেকে বিরত থাকবেন। এবং অনেকের মধ্যে ফুল দেওয়ার প্রচলন দেখা যায় সেটা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন।
- কারবালার দীনকে স্মরণ করে অনেকেই যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে প্রদর্শন করেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল গুলো থেকে বিরত থাকবেন।
- অনেকেই বিভিন্ন প্রকার কথা বলে শ্লোক ধরে স্লোগান দিয়ে থাকেন। এই কাজটি ভুলেও করা যাবেনা।
- হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো হয় । এটা করলে অনেকে মনে করে যে, যে বাচ্চা টিকে ভিক্ষুক বানানো হয়েছে তার দীর্ঘায়ু হবে। এটি সম্পূর্ণরূপে মহরম বিষয়ে কু-প্রথা।
- শোক পালনের নামে নির্দিষ্ট পোশাক পালন করা থেকে বিরত থাকবেন।
- আমরা প্রকার অপপ্রচার করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন:
- দশে মহররম পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে।
- ঐদিন কিয়ামত সৃষ্টি হবে।
আরো অনেক বিষয়ে ঐদিন অনেকেই অপপ্রচার থাকে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন।
আজ এ পর্যন্তই আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আপনাকে সৃষ্টিকর্তার নিয়ম নীতি প্রণয়ন করা উচিত এবং অপপ্রচার থেকে দূরে থাকা উচিত।