আস সালামুয়ালাইকুম, পাঠক। আশা করছি , আল্লহ্ রহমতে সবাই ভালো আছেন। সুখ-দু;খ, ভালো-খারাপ, আনন্দ-বেদনা, বিপদ-আপত ইত্যাদি নিয়েই জীবন। আমরা বিভিন্ন সময়েই বিভিন্ন বিপদে পড়ে থাকি । এই সমস্যা বা বিপদ থেকে বেচেঁ থাকার জন্য কুরআন-সুন্নার অনেক দোয়া ও আমল রয়েছে।
যা কার্যকর এবং পরীক্ষিত যা অনেক নবী , রাসূল , পয়গাম্বরদের থেকে শুরু করে অসংখ্য মানব বাস্তব জীবনে প্রতিকার পেয়ে। আজকে আপনাদের সামনে বিপদ থেকে বাচাঁর সেরা ১০ টি কার্যকরী আমল নিয়ে বলার চেষ্টা করবো , ইনশাআল্লাহ্ । আল্লাহ্ সকলকে হেফাজত করুন এবং বিপদ-আপত থেকে রক্ষা করুন, আমিন। কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
১. সুরা আল-ফাতেহা
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ – مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ – إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ – اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ – صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
পবিত্র কুরআনের একটা বরকতময় সূরা হচ্ছে এটি। কুরআনের ১১৪ টি সূরা মধ্যে সূরা আল-ৈফাতেহা নিয়েই শুরু। যার জন্য সূরা ফাতিহাকে ‘ফাতিহাতুল কুরআন’ বা কুরআনের শুরু বলে অভিহিত করা হয় । সূরা আল-ফাতেহার ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। তাওয়ারিখে মদিনা হতে –
হজরত আলী রা: বলেছেন, কোনো বিপদে পতিত ব্যক্তি এক হাজার বার সূরা ফাতিহা পাঠ করলে ওই ব্যক্তির আর বিপদ থাকতে পারে না। হজরত ইমাম জাফর সাদেক রা: বলেছেন, ‘৪১ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে খাওয়ালে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাবে’। (তাওয়ারিখে মদিনা)।
এছাড়াও আরো অসংখ্য ফজিলত আছে এই সূরা আল-ফাতেহার।
২. দোয়ায়ে ইউনুস
দোয়ায়ে ইউনুস (আ.): রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন। ’ (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস নম্বর: ২২৯২)।
لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
উচ্চারণ: ‘লাইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতুমিনাজ্জালিমিন’ (সুরা আম্বিয়া: ২১/৮৭)
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
- Read More : ১০ টি অনুপ্রেরণামূলক হাদিস, যা আপনাকে যেকোনো কাজে অনুপ্রেরণা দিবে।
- Read More : মহররম মাস এবং আশুরার তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়
৩.
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদ-আপদ কিংবা দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে পড়লে উম্মতদের কে নিম্নের দোয়া পড়তে বলতেন।
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْل – نِعْمَ الْمَوْلِى وَ نِعْمَ النَّصِيْر
উচ্চারণ : হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাছির।’
অর্থ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কাজ সম্পাদনকারী। আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।’
৪.
তিরমিজি হাদিসে হতে –
হজরত ওমর (র:) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স:) বলেছেন, ‘কেউ বিপদগ্রস্ত লোক দেখলে বলবে (নিচের দোয়া পড়তে )-
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ عَافَانِىْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ – وَ فَضَّلَنِىْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَنْ خَلَقَ تَفْضِيْلَا
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মানিবতালাকা বিহি; ওয়া ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।’
অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেছেন; তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তিনি তার মাখলুক থেকে মাখলুকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ তখন তাকে এ মুসিবত কখনো স্পর্শ করবে না।’ (তিরমিজি)
৫.
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো কঠিন সমস্যা বা বিপদের সম্মুখীন হতেন তখনই আল্লাহর কাছে একান্তভাবে দোয়া চাইতেন । বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে দোয়া টি করতেন –
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
উচ্চারণ : ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।
অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।’ (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত)
৬.
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِالله
উচ্চারণ : ‘লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’
অর্থ : ‘আল্লাহর সাহায্য ব্যতিত কোনো উপায় নেই আর কোনো ক্ষমতাও নেই।’ এ দোয়াটি জান্নাতের গোপন ভাণ্ডারসমূহের একটি। বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বহু মানুষ থেকে পরিক্ষীত দোয়াও একটি দোয়া হচ্ছেএটি।
৭. সহিহ মুসলিম হতে :
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে যে, হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে সে যদি এই দোয়া পাঠ করে- আল্লাহ তায়ালা তাকে তার বিপদের প্রতিদান দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।
উচ্চারণ :
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! বিপদে আমাকে সওয়াব দান করুন এবং যা হারিয়েছি তার বদলে তার চেয়ে ভালো কিছু দান করুন। -সহিহ মুসলিম
আজ এ পযর্ন্ত ই। আশা করছি আর্টিকেল টি আপনাদের কাজে দিবে। বিপদ- আপদে আল্লাহ্ প্রতি ভরসা রাখুন । ইনআল্লাহ্, আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্তম ফয়সাকারি ।
মাশাল্লাহ